Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

শোক থেকে শক্তিতে কৃষির জয়যাত্রা

শোক থেকে শক্তিতে কৃষির জয়যাত্রা
মোঃ সায়েদুল ইসলাম
আগস্ট বাঙালি জাতির শোকের দিন। শ্রাবণের ধারার সাথে মিতালি করে বাংলার আকাশ বাতাস প্রকৃতিও অশ্রুসিক্ত হয়ে উঠেছিল এদিনে। কি নিদারুণ কষ্ট, কি সীমাহীন লজ্জা, কি অপরিসীম যাতনার একটি দিন বাংলাদেশ দেখেছে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। ভোর বেলা শুদ্ধ বাতাসে যখন প্রকৃতি ¯িœগ্ধ হয়ে ওঠে সেই ¯িœগ্ধতাকে ছাপিয়ে রক্তের তাজা গন্ধে কলুষিত হয়েছিল আগস্টের সেই সকাল। ঘাতকের উদ্যত অস্ত্রের সামনে ঝাঁঝরা হয়ে যাওয়া একটি পরিবার শুধু পরিবারই নয় সেটি ছিল পুরো বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু মানেই বাংলাদেশ। বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা এবং স্থপতি তিনি। যতদিন বাংলাদেশ বাঁচবে ততদিন অমর থাকবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধু কেবল একজন ব্যক্তি নন, একজন মহামানব তথা মহান আদর্শের নাম। এই আদর্শে উজ্জীবিত হয়েছিল গোটা দেশ। সমগ্র জাতিকে তিনি বাঙালি জাতীয়তাবাদের প্রেরণায় উদ্বুদ্ধ করেছিলেন উপনিবেশিক শাসক শোষক পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়তে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে বাংলার সাহসী আপামর জনতা বাংলাকে শত্রুমুক্ত করতে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। ত্রিশ লাখ প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত হয় বাংলাদেশের স্বাধীনতা। কিন্তু কে জানত এই স্বাধীন দেশে স্বাধীন মানুষের ভিড়ে অমানুষের আস্তানা গড়ে উঠবে। মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত অপশক্তি তাদের পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে একের পর এক চক্রান্তের ফাঁদ পেতেছে। সেনাবাহিনীর বিপথগামী উচ্চাভিলাষী কয়েকজন সদস্যের মাধ্যমে ষড়যন্ত্রকারীরা তাদের চক্রান্তকে বাস্তবরূপ দিয়েছিল। ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়ি যেটি বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুতিকাগার নামে পরিচিত সেখানেই গভীর রাতে হামলা চালায় তারা। বিশ্ব ও মানবসভ্যতার ইতিহাসে ঘৃণ্য ও নৃশংসতম হত্যাকা-ের মাধ্যমে সেদিন তারা কেবল বঙ্গবন্ধুকেই নয়, তার সাথে বাঙালির হাজার বছরের প্রত্যাশার অর্জন স্বাধীনতার আদর্শগুলোকেও হত্যা করতে চেয়েছিল। ঘাতকের নির্মম বুলেটের আঘাতে শহীদ হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বঙ্গবন্ধুর স্ত্রী শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, পুত্র শেখ কামাল, শেখ জামাল, শেখ রাসেলসহ বঙ্গবন্ধু পরিবার পরিজনসহ ২৬ জন। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা সে সময় পশ্চিম জার্মানিতে অবস্থান করার কারণে তারা প্রাণে বেঁচে যান। সে সময় তাদের বাংলাদেশে ফিরে আসার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। শুধু তাই নয় গোটা বাঙালি জাতি শোকে মুহ্যমান হলেও ভয়ঙ্কর ওই হত্যাকা-ে খুনিদের শাস্তি নিশ্চিত না করে দীর্ঘ সময় তাদের আড়াল করার অপচেষ্টা করা হয়েছে। এমনকি খুনিরা পুরস্কৃত ও পুনর্বাসিত করা হয়েছে নানানভাবে। হত্যার বিচার ঠেকাতে কুখ্যাত ‘ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ’ জারি করেছিল বঙ্গবন্ধুর খুনি খন্দকার মোশতাকের সরকার।
কি না করেছিলেন বঙ্গবন্ধু বাংলার মানুষের জন্য। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু সরকার কৃষিকে সর্বাধিক অগ্রাধিকার দিয়েছিল। তিনি খাসজমিসহ ভূমিহীন কৃষকদের মাঝে বিতরণযোগ্য জমির পরিমাণ বৃদ্ধি করার জন্য পরিবার প্রতি জমির সিলিং ১০০ বিঘা নির্ধারণ করে দেন। তিনি উন্নত বীজ, সার, সেচের নানারকম পাম্প ও অন্যান্য কৃষি উপকরণ সরবরাহের পাশাপাশি সারের নিম্নমূল্য নির্ধারণ করেন এবং কৃষিতে ভর্তুকি প্রদান করেন। পাকিস্তানি আমলে রুজু করা ১০ লাখ সার্টিফিকেট মামলা থেকে কৃষকদের রক্ষা করেন। প্রান্তিক কৃষকদের জন্য তিনি ২৫ বিঘা পর্যন্ত জমির খাজনা চিরতরে রহিত করে দেন। সরকার ইজারাদারি প্রথা বিলুপ্ত করে ভূমি প্রশাসন ও ভূমি সংস্কার মন্ত্রণালয় স্থাপন করেন এবং সেলামি ছাড়া জমি বণ্টনের ব্যবস্থা করেন। বঙ্গবন্ধু তার প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় অবকাঠামো পুনর্গঠনের সাথে সাথে তিনি কৃষি ব্যবস্থাপনা আধুনিকীকরণে প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা নিশ্চিত করতে সর্বাধিক মনোযোগ দেন। প্রথম বার্ষিক উন্নয়ন পরিকল্পনায় ৫০০ কোটি টাকার উন্নয়ন কর্মসূচিতে তিনি ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিলেন শুধু কৃষি খাতের জন্য।
বঙ্গবন্ধু কৃষি উন্নয়নের বৈপ্লবিক পদক্ষেপের মধ্যে আরেকটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ হলো কৃষিভিত্তিক প্রতিষ্ঠান স্থাপন, পুনঃসংস্কার, উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর পাকিস্তান কাঁচামাল সরবরাহ বন্ধ করে দিলে স্থানীয়ভাবে তুলার উৎপাদনের গুরুত্ব অনুভূত হয়েছিল। এ সময় আমাদের বস্ত্র শিল্পগুলো কাঁচামালের অভাবে মারাত্মক সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিল। এ অবস্থায় ১৯৭২ সালে দেশে তুলার চাষ সম্প্রসারণ করার জন্য কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীনে তুলা উন্নয়ন বোর্ড গঠন হয়। বঙ্গবন্ধু উপলব্ধি করেছিলেন অর্থনৈতিকভাবে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধ একটি সোনার বাংলা গড়তে কৃষি শিল্পের উন্নয়ন অপরিহার্য। কৃষি গবেষণা ছাড়া যে কৃষির উন্নয়ন সম্ভব নয়, বঙ্গবন্ধু তা মর্মে মর্মে উপলব্ধি করেছিলেন। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার আগে এ দেশে কৃষি গবেষণাধর্মী কাজ পরিচালনার জন্য তেমন কোনো সমন্বয়ধর্মী প্রতিষ্ঠান ছিল না। তাই ১৯৭৩ সালেই তিনি প্রতিষ্ঠা করেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল, কৃষিতে গবেষণা সমন্বয়ের শীর্ষ প্রতিষ্ঠান। ১৯৭২ সালে নতুন নামে পুনর্গঠন ও বিস্তৃতি ঘটান ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের। তখনই ঢাকার আণবিক গবেষণা কেন্দ্রে ‘কৃষি পারমাণবিক গবেষণা ইনস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার এগ্রিকালচার (ইনা) প্রতিষ্ঠা করার নির্দেশ দেন, যা ১৯৭৫ সালের গোড়ার দিকে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার এগ্রিকালচার (বিনা) হিসেবে বাংলাদেশে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে স্থানান্তর হয়। কৃষি গবেষণার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি), বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি), বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার এগ্রিকালচার (বিনা) এসবের অবদান সর্বজনবাদিত। পুনর্গঠন করা হয় হর্টিকালচার বোর্ড, সিড সার্টিফিকেশন এজেন্সি ও রাবার উন্নয়ন কার্যক্রম। বঙ্গবন্ধু বিএডিসি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এ দেশে কৃষির প্রধান উপকরণ সেচ ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ এবং বীজ ও সার সরবরাহের প্রচলন করেন। ইরি বীজ সরবরাহে এ প্রতিষ্ঠান একক ও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। বাংলার সোনালী আঁশ বলে খ্যাত পাটের উপর গবেষণা কার্যক্রমের গুরুত্ব বিবেচনায় স্বাধীনতাত্তোর প্রাক্তন জুট এগ্রিকালচার রিসার্চ ল্যাবরেটরিকে জুট রিসার্চ ইনস্টিটিউট নামে পুনর্গঠন করা হয়।
কৃষিক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুর আরেকটি সুদূরপ্রসারী সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের কৃষিতে এক দীর্ঘমেয়াদি ও যুগান্তকারী পরিবর্তনের সূচনা করে। অন্যান্য টেকনিক্যাল গ্র্যাজুয়েট যেখানে সরকারি চাকরিতে প্রথম শ্রেণির মর্যাদায় যোগদান করতেন, সেখানে কৃষি গ্র্যাজুয়েটদের সরকারি চাকরিতে তৃতীয় শ্রেণির মর্যাদায় যোগদান করতে হতো। একই দেশে টেকনিক্যাল গ্র্যাজুয়েটদের মধ্যে বিদ্যমান বৈষম্য কর্মক্ষেত্রে এক জটিল ও বহুমাত্রিক টানাপড়েন সৃষ্টি করেছিল। কৃষিশিক্ষা, কৃষি গবেষণা, কৃষি সম্প্রসারণসহ কৃষির সর্বক্ষেত্রে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছিল। পাকিস্তান সরকার আমাদের কৃষির উন্নতি হোক, সে বিষয়ে ভীষণ রকম উদাসীন ছিল। সে কারণে বিভিন্ন প্রকার টেকনিক্যাল গ্র্যাজুয়েটদের মধ্যে বিদ্যমান বৈষম্য নিরসনে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। তাছাড়া কৃষিকে তারা তেমন গুরুত্ব দেয়নি। বঙ্গবন্ধু বুঝতে পেরেছিলেন, মেধাবী শিক্ষার্থীদের যদি কৃষিশিক্ষায় আগ্রহী করে তোলা না যায়, তাহলে কৃষিতে কাক্সিক্ষত লক্ষ্য অর্জন করা কখনও সম্ভব নয়। অতঃপর সবদিক বিবেচনা করেই বঙ্গবন্ধু ১৯৭৩ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সরকারি চাকরিতে অন্যান্য টেকনিক্যাল গ্র্যাজুয়েটদের মতো কৃষি গ্র্যাজুয়েটদেরও প্রথম শ্রেণির মর্যাদা প্রদানের ঘোষণা দেন।
কৃষিকাজে কৃষকদের ব্যাপকভাবে মনোনিবেশ ও কৃষি উৎপাদনের উৎসাহ দানের জন্য জাতীয় পর্যায়ে বঙ্গবন্ধু পুরস্কার দেয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন। ১৯৭৩ সালে রাষ্ট্রপতির আদেশ নং ২৯/১৯৭৩ এর মাধ্যমে কৃষিক্ষেত্রে সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে কৃষি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে কৃষি খাতে নতুন নতুন অর্জন, কৃষি প্রযুক্তির উদ্ভাবন এবং সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালনে উৎসাহিত করার উদ্দেশ্যে ‘বঙ্গবন্ধু পুরস্কার’ প্রবর্তন করা হয়।
বঙ্গবন্ধুর নীতি ছিল কৃষিক্ষেত্রে বাংলাদেশকে রোল মডেলে পরিণত করা। শত সহ¯্র বাধা বিপত্তি পেরিয়ে বাংলাদেশ আজ কৃষি ক্ষেত্রে এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী রাষ্ট্র। বঙ্গবন্ধু তনয়া মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে কৃষি খাতে এগিয়ে নিয়ে যেতে নানাবিধ কর্মপরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন। খাদ্য ঘাটতি পূরণ করে বাংলাদেশ আজ রপ্তানিকারক দেশে পরিণত হয়েছে। ২০১৫ সালে বাংলাদেশ নিম্ন আয়ের দেশ থেকে নিম্নমধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয় এবং ২০২৬ সালে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হওয়ার জন্য দু’বার ত্রিবার্ষিক মূল্যায়নে উত্তীর্ণ হয়। বাংলাদেশ এখন মাতৃ মৃত্যুহার ও শিশু মৃত্যুহার কমানো, প্রত্যাশিত গড় আয়ু বৃদ্ধি, খাবারের গুণগত মান বৃদ্ধিসহ নানাবিধ মানদ-ে বিশ্বে এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে, যার মূলে রয়েছে কৃষির রূপান্তর।
সরকারের কৃষকবান্ধব নীতি ও সময়োপযোগী উদ্যোগ গ্রহণের কারণে খোরপোশের কৃষি ক্রমান্বয়ে বাণিজ্যিক কৃষিতে রূপান্তরিত হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তন ও বৈরী প্রকৃতির প্রভাবে ক্রমহ্রাসমান চাষযোগ্য জমি, জনসংখ্যা বৃদ্ধি, বন্যা, খরা, লবণাক্ততা ইত্যাদির বিপরীতে বাংলাদেশ দানাদার খাদ্যে আজ স্বয়ংসম্পূর্ণ। দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে সরকার রাসায়নিক সারের দাম দফায় দফায় কমিয়ে কৃষকের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে নিয়ে এসেছে। চার দফায় সারের মূল্য কমিয়ে ইউরিয়া সারের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতি কেজি ১৬ টাকা, এমওপি সারের ৭০ টাকা থেকে কমিয়ে ১৫ টাকা, ডিএপি সারের দাম ৯০ টাকা থেকে কমিয়ে ১৬ টাকা। চলমান রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধ পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক বাজারে সারের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাওয়ায় পাঁচ দফায় দেশে ইউরিয়া সারের দাম প্রতি কেজি ১৬ টাকা থেকে বৃদ্ধি করে ২২ টাকা পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে। ২০২০-২০২১ অর্থবছরে সারের ভর্তুকি দেয়া হয়েছে ৭ হাজার ৭১৭ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে সারের ভর্তুকি দেয়া হয়েছে প্রায় ২৮ হাজার কোটি টাকা। সেচের জন্য ব্যবহৃত বিদ্যুতের ওপর ভর্তুকি দেয়া হয়েছে। কৃষি যান্ত্রিকীকরণ প্রকল্পের আওতায় ৫০-৭০% ভর্তুকি মূল্যে বিক্রয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে কৃষি যন্ত্রপাতি। মোট বাজেটের প্রায় ২ শতাংশ ব্যয় করা হচ্ছে ভর্তুকি খাতে। এছাড়া কৃষি খাতের সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য কতগুলো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। আধুনিক ও খরাসহিষ্ণু জাতের উদ্ভাবন, পানি সাশ্রয়ী সেচ প্রযুক্তি আবিষ্কার, ভূ-উপরিস্থ পানি ব্যবহারের মাধ্যমে সেচ এলাকার সম্প্রসারণ, সমন্বিত বালাইব্যবস্থাপনা, কৃষি যান্ত্রিকীকরণ, সেচের যন্ত্রপাতির সহজলভ্যতা বৃদ্ধি, কৃষি সম্প্রসারণ, ন্যায্যমূল্য কৃষি উপকরণ সরবরাহ নিশ্চিত করা, খাদ্যশস্যের পর্যাপ্ত সংরক্ষণ সুবিধাদি নিশ্চিত করাসহ নানাবিধ কৃষিবান্ধব কর্মযজ্ঞে কৃষিতে সমৃদ্ধ হয়ে উঠেছে আমাদের বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ দানাদার খাদ্যশস্য উৎপাদনের পাশাপাশি সবজি, ফল, ফুলসহ নানারকম কৃষি পণ্য উৎপাদিত ও বাজারজাত করা হচ্ছে। কৃষিপণ্য রপ্তানি বৃদ্ধিতে টিসুকালচার প্রযুক্তি ও উত্তম   কৃষিচর্চা মেনে ফসল উৎপাদন, রপ্তানি উপযোগী জাতের ব্যবহার, আধুনিক প্যাকিং হাউজ নির্মাণ, অ্যাক্রিডিটেড ল্যাব স্থাপনসহ নানান কাজ চলমান রয়েছে। সবজির উচ্চফলনশীল জাত ও আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারের ফলে ২০১৫-১৬ অর্থবছর থেকে ২০১৯-২০ অর্থবছর পর্যন্ত উৎপাদন ২০ দশমিক ৯ শতাংশ বৃদ্ধি  বেড়েছে। সবজির পাশাপাশি খেজুর, বড়ই, মাল্টা, ড্রাগন, অ্যাভোক্যাডো, স্ট্রবেরি, বাউকুল, আপেলকুলসহ নানাবিধ বর্ণিল ও বৈচিত্র্যের ফল আমাদের দেশে চাষ হচ্ছে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার হিসেব অনুযায়ী ১৫ বছর ধরে আমাদের দেশে ১১ দশমিক ৫ শতাংশ হারে ফল উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমান বাংলাদেশ বিশ্বের প্রায় ১১৮টি দেশে সবজি রপ্তানি করছে। কৃষি পণ্য রপ্তানিতে ১০০ কোটি ডলারের মাইলফলক ছাড়িয়ে গেছে। সরকারের লক্ষ্য নিরাপদ ও পুষ্টিসমৃদ্ধ খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করে কৃষিকে টেকসই ও লাভজনক কৃষিতে রূপান্তর করা। কাজুবাদাম, কফি প্রভৃতি অর্থকরী ফসল নিরাপদভাবে দেশের মাটিতে উৎপাদন করে বিদেশে রপ্তানি করা। আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে কৃষিকে উন্নত ও আধুনিক করা। তাছাড়াও আগামী তিন বছরে ভোজ্যতেলের চাহিদার চল্লিশ ভাগ স্থানীয়ভাবে পূরণ করার লক্ষ্যে রোডম্যাপ তৈরি ও বাস্তবায়নের কার্যক্রম অব্যাহত রাখা।
জাতির পিতার জন্মশতবর্ষের স্লোগান ‘শোক থেকে শক্তি, শোক থেকে জাগরণ’ তা যেন আজ কৃষির উন্নয়নের ধারায় প্রতিফলিত হচ্ছে। আজ থেকে সাতচল্লিশ বছর আগে বঙ্গবন্ধুকে হারিয়ে বাংলাদেশ যে শোকের সাগরে ভেসেছে, বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলার স্বপ্নপূরণে আজ তাই ততটাই প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছে পুরো জাতি। বাংলাদেশ এক অপার বিস্ময়ের দেশ। বাংলাদেশ অযুত সম্ভাবনার দেশ। বঙ্গবন্ধুর কৃষিনীতির পথ ধরেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ খাতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ ও পর্যাপ্ত আর্থিক বরাদ্দ প্রদানের মাধ্যমে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গঠনে কৃষি খাতের উন্নয়ন ও কৃষকদের কল্যাণকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে রূপকল্প ২০৪১, অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা, জাতীয় কৃষিনীতি ২০১৮, টেকসই অভীষ্ট ২০৩০, বাংলাদেশ ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০ এবং অন্যান্য পরিকল্পনা দলিলের আলোকে দেশকে এগিয়ে নিতে সরকার, কৃষি মন্ত্রণালয়সহ অন্যান্য দপ্তরসংস্থা সকলে নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছে। সোনাফলা মাটি, সমৃদ্ধ ও উন্নত কৃষি ও সোনার মানুষ সমন্বয়ে এগিয়ে চলুক সুখী সমৃদ্ধ বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা। আসুন দেশকে এগিয়ে নিতে আমরা সকলে হই প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

লেখক : সচিব, কৃষি মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ সচিবালয়, ঢাকা।www.moa.gov.bd


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon